কলেজে ঢুকতেই একটা মেয়ে আমার শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে মাঠের মাঝখানে নিয়ে গেলো।আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না,আমি অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি!কলেজের সব ছাত্র-ছাত্রিরা আমার দিকে অবাক দৃষ্টতে তাকিকে আছে।মনে হচ্ছে আমি যেন সারকাসের কোন জোকার, সবাই আমাকে দেখতে এসেছে। কিছুক্ষন তাকিকে থাকার পর, আমি মেয়েটিকে জিগ্গাসা করলাম,আপু এটা কি করছেন? কথা বলার সাথে সাথে ঠাসস ঠাসস ঠাসস ঠাসস করে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে দিলো আমার গালে। কাকে যেন ফোন করে আসতে বললো! কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে আসলো।
মেয়ে:এই দেখ রিয়া কাল যে ছেলেটি তোর সাথে খারাপ আচরন করেছিল তাকে আমি তোর সামনে ধরে এনেছি।এখন তুই বল এর কি শাস্তি হওয়া উচিৎ?
রিয়া:জান্নাত তুই এটা কাকে নিয়ে এসেছিস?এই ছেলেটা সেই ছেলে নয়!
ওহ তার মানে এই মেয়েটার নাম জান্নাত। নামটা হলো জান্নাত আর কাজ হলো জাহান্নাম(মনে মনে)
জান্নাত:তুই একটু ভালো করে দেখ
রিয়া:আমি বললামতো এটা সেই ছেলে নয়।
এতোখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি মজা দেখছিলাম।
এখনো আমি চুপ করে আছি।একটু পর হেড স্যার আসলো, এবং বললো--
হেড স্যার:জান্নাত তুমি এইটা মোটেও ঠিক করোনি।ওএইসবের কিছুই জানেনা।ও আজকে কলেজে নতুন এসেছে।তুমি ওর কাছে ক্ষমা চাও।
জান্নাত:ওর ভাগ্য ভালো যে মেরে ওর হাত-পা ভেঙ্গে দিইনি,সুধু দুইটা থাপ্পড় দিয়েছি।
কি বেয়াদব মেয়েরে।স্যারের মুখের উপর কথা বলে।(মনে মনে)
হেড স্যার:এইটা তুমি ঠিক করলে না।
জান্নাত:এখান থেকে যান,নয়তো আপনাকে একটা থাপ্পড় দেব।
আমি ওখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।
কারন,সবাই আমার দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়েছিল আর আমার উল্টা-পাল্টা কথা একবারে সয্য হয়না।আর যদি একবার আমার রাগ উঠে যায়,তাহলে আমি নিজেকে কন্টল করতে পারিনা।
ওখান থেকে এসে আমি একটা গাছের নিচে বসে বসে ভাবছি,আজ প্রথম কলেজে আসলাম,এর ভিতরে এইসব হয়ে গেলো।যখনই চেষ্টা করি ভালো হওয়ার ঠিক তখনই কোন একটা সমস্যা আমার সামনে চলে আসে।
ক্লসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
ক্লাস রুমটা খুজে পেতে দেরি হলো না।
কারন,একটু আগে একটা ছেলে এসে আমাকে বললো,ভাইয়া আপনাকে হেড স্যার ডাকছে।
আমি:যাও তুমি,আমি যাচ্ছি।
আমি:স্যার আসতে পারি?
হেড স্যার:এসো রাজ।
হেড স্যার:আমি খুব দুঃখিত।তুমি দয়া করে এই ঘটনাটা তোমার বাবাকে জানিয়ো না।উনি শুনলে আমার চাকরী থাকবে না।
আপনারা ভাবছেন কে আমি? কি আমার পরিচয়? হেড স্যার আমার সাথে এমন ব্যবহার করছে কেন?
আমার পরীচয় আমি পরে দেব।
হেড স্যারের সাথে আমার বাবার আগে থেকে সম্পর্ক আছে।
আমি:চিন্তা করবেন না স্যার,আমি বাবাকে কিছু বলবো না।
হেড স্যার:রাজ তুমি ক্লাসে যাও।
আমি:জি স্যার।
হেড স্যার:সাকিব তুমি রাজকে ক্লাসে নিয়ে যাও।(যেই ছেলেটি আমাকে ডাকতে গিয়েছিল)
আমি:তোমার নাম কি সাকিব?
সাকিব:জি ভাইয়া।
আমি:তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
সাকিব: বি এ সেকেন্ড ইয়ার।
আমি:তার মানে আমরা একসাথে?আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
সাকিব:জি ভাইয়া।
আমি:কিন্তু একটা শর্ত আছে।
সাকিব : কি শর্ত?
আমি:আমাকে ভাইয়া বলা যাবে না,আর তুই করে বলতে হবে।
সাকিব :ঠিক আছে।
আমি:আচ্ছা সাকিব একটা কথা বলতো? ওই মেয়েটা কে? আর ও স্যারের সাথে এমন ব্যবহার করলো কেন?
সাকিব:ওই মেয়েটা খুবই অহংকারী।ওর বাবা হলেন এই থানার উচি,তাই ওকে দেখে সব স্যার,ও ছাত্ররা ভয় পাই।
আমি:ও
সাকিব:হুম।এটা হলো আমাদের ক্লাস।চল ভিতরে যায়!
আমি:হুম,চল।
একটু পর ক্লাসের ঘন্টা পড়লো,
ক্লাসে স্যার ঢুকলো।
স্যার:আসসালামু আলাইকুম।
সবাই:ওয়াইকুম আসসালাম স্যার।
স্যার:কেমন আছো সবাই?
সবাই:আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন স্যার?
স্যার:আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভালো আছি।ক্লাসে কিছু নতুন নতুন ছাত্র এসেছে দেখছি।(আমাকে সহ আরো কিছু নতুন ছাত্র আছে)আগে তোমাদের পরীচয় দাও,তারপর আমি লেককচার শুরু করবো।
প্রথমজন: স্যার আমি সাগর ইসলাম।
দ্বতীয়জন:স্যার আমি হাসিবুল ইসলাম।
এবার আমার পালা,স্যার আমি মাহমুদ হাসান রাজ।
একে একে নতুন ছাত্রগুলো পরীচয় দিল।
তারপর স্যার লেকচার দিতে শুরু করলেন,এর মাঝে দেখলাম জান্নাত আর ওর বাকি বান্ধবীগুলো এই ক্লাসের দিকে আসছে।
তারমানে ওই মেয়েটি আমাদের ক্লাসে পড়ে।স্যারের অনুমতি না নিয়েই ক্লাসে ঢুকে পড়লো।স্যার তার দিকে একবার রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার লেকচার দেওয়ায় মন দিলো।ক্লাসের ঘন্টা শেষ হলেই স্যার ক্লাস থেকে চলে গেল।
জান্নাত:ওই দেখ!(আমাকে উদ্দেশ্য করে)ছোটলোকটা আমাদের ক্লাসে পড়ে।(এটা বলে ওর বান্ধবীরা সবাই হাসতে শুরু করলো)
দিশা:কে জানে!এই স্যারদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি?কোথাকার এক কোন বস্তির ছেলেকে এই কলেজে এডমিশন দিয়েছে।আমারতো দেখেই কেমন বুমি বুমি ভাব আসছে।(এগুলো বলছে আর ওরা সবাই মিলে হাসাহাসি করছে)
দ্বিতীয় ঘন্টা পড়লো,এবং স্যার আসলো।
স্যার সবাইকে সালাম দিয়ে,লেকচার দেয়া শুরু করলো।
লেকচার দেওয়ার মাঝখানে হঠাত জান্নাত বলে উঠলো
জান্নাত:স্যার এই রকম নামিদামি কলেজে এইসব ছোটলোক কে এডমিশন দিয়ে কলেজের নাম খারাপ করছেন কেন? আপনাদের কে পাগলা কুকুরে কামড় দিয়েছে নাকি?(ওর বান্ধবীরা হাসাহাসি করছে)
স্যার:কাকে এই কলেজে এডমিশন দেব আর কাকে দেব না এটা নিয়ে তোমার চিন্তা করার কোন দরকার নেই।তুমি তোমার নিজের পড়া করো।আর সবাই কে সম্মান দিতে শেখ।আমরা কে গরীব আর কে বড়লোক এটা বড় বিষয় নয়,বড় বিষয় হচ্ছে আমরা সবাই মানুষ।আর একজন ভালো মানুষ হিসাবে আমাদের কর্তব্য হলো অন্য একজন মানুষ কে সম্মান করা।
জান্নাত:তোর লেকচার তোর কাছেই রাক।তুই ওই ছোটলোকটার জন্য আমাকে অপমান করিস?তোর সাহসতো কমনা!(স্যার কে তুই করে বলছে)
স্যার :ভদ্রভাষায় কথা বলো জান্নাত,এগুলো কি রকম অসভ্যতামি!
জান্নাত:কি তুই আমাকে ভদ্রতা শিখাবি,এই বলে রাগি দৃষ্টিতে স্যারের দিকে এগিয়ে গেল।
আর স্যার কে
চলবে?
গল্পের নাম:অহংকারী মেয়ে।
পার্ট:1
(ভুল টুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর আমাকে ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন)
আপনারা বললে পরের পার্ট দেব।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন